নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আমার যাত্রা সহজ ছিল না। উগান্ডায় তরুন উদ্যোক্তাদের সযোগ-সুবিধে খুবই কম। আর নারীদের ক্ষেত্রে তো এ সুযোগ আরও কম ।
।দক্ষিণ-পশ্চিম উগান্ডার কাবিলায় আমার জ এবং বেড়ে ওঠা। আমার বয়স যখন খুবই কম সে সময় থেকেই আমি মায়ের কাছে ঝুড়ি , রুটি বা নানা ধরণের গহণা বানাতে শিখেছি। আমার বাবা ছিলেন আনারস চাষী।
মা-বাবা দুইজনই আমার সকল কাজের বিরাট অনুপ্রেরণার উৎস। উদ্যোক্তা হিসেবে কাজের শিক্ষা আমি মায়ের কাছ থেকেই পেয়েছিলাম। ব্যবসায়ের নিয়মনীতিও তাঁর কাছে শেখা। মা দেশীয় এক ধরণের মদ তৈরি করতেন। সেগুলো বি হতো স্থানীয় বারগুলোতে। এই মদ বি র টাকাতেই আমাদের পড়াশোনার খরচ চলত। পরিবারের নানা খরচও মিটতো এই ব্যবসার টাকায়।
মাধ্যমিক স্কুলে আমার পড়াশোনার খরচ চালানোর মতো সঙ্গতি ছিলনা আমার পরিবারের। আমার পড়ার খরচ চালাতে সাহায্যের হাত বাড়ালেন আমাদের এক আ য়। আমার সেই আÍ য়ের সেই সহায়তা আমাকে যথেষ্ট অনুপ্রাণিত করেছে, শিখিয়েছেও অনেক কিছু। আমি পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধের মূল্যটা শিখেছি। শিখেছি অন্য পরিবার বা সেই সঙ্গে পুরো সম্প্রদায়ের প্রতি দায়িত্ববোধও। আমি তখন বুঝতে পারিনি, মানুষের প্রতি এই শ্রদ্ধাবোধ পরবর্তী সময়ে আমার জীবনে বিরাট প্রভাব ফেলবে। এখন এর প্রভাব প্রতিষ্ঠানের কর্মী ব্যবস্থাপনা এবং প্রশিক্ষণেও রয়ে গেছে।
আমি ছিলাম আমার পরিবারের প্র ম সন্তান। সেই হিসেবে ছোটদের জন্য উদাহরণ তৈরির দায়িত্ব ছিল আমার ওপর। আমাকে সত্যিই একজন রোল মডেল হতে হয়েছিল।
আমার পুরো শিক্ষা জীবনে আমি শিখেছি, দারিদ্রের দুষ্টচ ভাঙার একটিই পথ আছে। তাহলো কঠোর পরিশ্রম আর যত দ্রুত সম্ভব আয় করতে শুরু করা। তাই স্কুলের গন্ডি পার হয়েই আমি পুরণো কাপড়চোপড় বেচার কাজ শুরু করলাম। আমার সঞ্চয় থেকেই ব্যবসার পয়সা জোগাড় করেছি। ছুটির সময়গুলোতে আমি আফ্রিকান মেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের তরুন সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করতাম।
মেকরেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার পর আমি গহণা বানানো এবং বি করতে শুরু করলাম। এ কাজ আমার মাই আমাকে শিখিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিনড়ব অফিসের ফেলে দেওয়া কাগজ ব্যবহার করে আমি এসব গহণা বানাতাম। এখান থেকে আমার বেশ আয় হতো। আমার নিজের প্রয়োজন তো মিটতোই, ছোট ভাইবোনের পড়াশোনার খরচ মেটাতোও আমি সেখান থেকে বাবামাে ক টাকা পাঠাতে পারতাম।
২০০৭ সালে উগান্ডার সরকার পাস্টিক ব্যাগের আমদানি, বিμি এবং উৎপাদন নিষিদ্ধ করে। প ্যাস্টিকের ব্যাগের বিকল্প কী হতে পারে তা অনেকেই জানত না। আমি আবিষ্কার করলাম, যেসব ফেলে দেওয়া তাগজ দিয়ে আমি গহণা বানাই সেব থেকেই আমি কাগজের ব্যাগ বানাতে পারি। আর এ ভাবনা থেকেই আমি ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করলাম ওরিব্যাগস ইনোভেশনস। শুরুতে আমার পুঁজি ছিল ৩০০ মার্কিন ডলার। এ টাকাটা জমিয়েছিলাম গহণার ব্যবসা করে।
ওরিব্যাগসে ব্যাগ উৎপাদনের কাজ করা মোটেও সহজ ছিলা না। দৃঢ় অঙ্গীকার এবং ত্যাগের সমন্বয়েই এটি সম্ভব হয়েছিল। দুই বছর ধরে কোনো লাভ ছাড়াই আমি ব্যবসায় চালিয়েছি। কেবল ব্যবসাটিকে টিকিয়ে রাখতে আমাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। এ সময় অনেকেই আমাতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমার অভিভাবক এবং বন্ধুরা এ সময় নানাভাবে সমর্থন দিয়েছেন। তাঁদের উপদেশও আমার কাজে লেগেছে। আমার এই কাগজের ব্যবসার ধারণা যখন উগান্ডা ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউটকে (ইউআইআরআই) জানালাম, তখন আমাকে ওরা কাজের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে চাইলো। স্থানীয়ভাবে পাওয়া কাঁচামাল যেমন কলার আঁশ এবং পুরণো কাপড়চোড় প্রμিয়াজাত করে কীভাবে কাগজ তৈরি করা যায় ইউআইআরআইয়ের গবেষকরা সে বিষয়েও আমাকে শিখিয়েছেন।
ওরিব্যাগসের কর্মীর সংখ্যা এখন ১৯ জন। এর মধ্যে ১৩ জন নারী, পুরুষ ছয়জন। ২০২০ সালের মধ্যে পূর্ব আফ্রিকায় পরিবেশ-বান্ধব সামগ্রি উৎপাদনে ওরিব্যাগস হবে প্রশত সারির প্রতিষ্ঠানÑএই
সংস্থাকে নিয়ে আমার লক্ষ্য এখন সেটাই। আমি খুশী, কারণ ওরিব্যাগস তার এই সক্ষমতার জানান ইতিমধ্যেই দিয়েছে।
আমার কর্মীদের সঙ্গে মিলে আমি আমাদের দক্ষ হাতে একেক বার একজন করে ব্যাগ বানাই। এসব বানাতে খুব কম প্রযুক্তির দরকার হয়। আর এটি উৎপাদন করতে কোনো কার্বন নিঃসরণ ঘটে না। উৎপাদনে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে মিশে থাকে যান্ত্রিক নির্ভুলতা। কৃষক এবং অন্য যারা আমাদের কাঁচামাল সরবরাহ করে তাদের ক্ষমতায়নের জন্য আমরা বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছি। বিশ্বের বড় বড় ব্যাগ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গাছ থেকে তৈরি কাগজ ব্যবহার করে। তবে আমরা কলার আঁশ এবং কাপড়চোড়রের বর্জ্য ব্যবহার করি।
জীবনে চলার পথে আমি অনেক কিছুই শিখেছি। এর কিছু আপনাদেরকে বলতে চাই। তাহলো, যখন আপনি ব্যবসায় শুরু করছেন তখন আপনার যা আছে তা দিয়েই শুরু করুন। আমি বলব কাজকর্মের দেখভাল করা এবং যোগাযোগ ব্যবসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এ জন্য, ছোট আকারে ব্যবসা শুরু করাটাই ভালো। চলতে পথে নানা প্রতিবন্ধকতা আসবে। আর দক্ষভাবে এসব সামলে আপনি যা অর্জন করবেন তা অমূল্য।
কিছু নারী আছেন যাঁরা এখনও নির্দিষ্ট চাকরির দিকে তাকিয়ে থাকেন। আমার মনে হয়, এটা একটা বড় ধরণের সমস্যা। তারা ভুলে যান যে, বিশ্বের বেশিরভাগ সফল ব্যবসায় খুব ছোট আকারে শুরু হয়েছিল। আমরা যদি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারি তবে বিশ্বের সব জায়গাতেই নারীর ক্ষমতায়ন ঘটবে। আমাদের আশেপাশে অসংখ্য সুযোগ ছড়িয়ে আছে। এসবের সঠিক ব্যবহার করলে আমাদের জীবন পাল্টে যেতে পারে।
এবার পাঠকদের জন্য কিছু প্রশড়ব:
১. ব্যবসায় শুরু করতে কোন কোন বিশেষ মূল্যবোধ এবং ব্যক্তিগত দক্ষতার দরকার যেসব আপনি ছোটবেলা থেকে এবং আপনার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শিখেছেন ?
২. ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনি অপনার দেশে কী একই ধরণের প্রতিবন্ধকতাগুলোর মুখোমুখি হন যেগুলো ব্যবসার মাধ্যমেই সমাধানযোগ্য? মনে রাখবেন, আপনার সমস্যার মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে সম্ভাবনা।
৩. আপনার ধারণা, সমাধান এবং ব্যবসায় নিয়ে নিয়ে আপনার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা কী?
১. বাজার বিশেষণ: আপনার এলাকার নানা প্রয়োজন এবং সুযোগ আছে। আপনার ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক দক্ষতা থেকে এসবের ক্ষেত্রে আপনি সমাধান দিতে পারেন।
২. ব্যবসায় বাড়ানো: আপনার যা আছে তা দিয়ে শুরু করুন। চলার পথে ভুল থেকে এবং সমস্যা থেকে শিখুন। এর সঙ্গে আপনি যা করছেন এর ওপর নজর দিন।
৩. যোগাযোগ: যেসব মানুষের দক্ষতা এবং প্রতিভা আছে এমন মানুষদের কাছে যান। এদের সহায়তা চান। এর ফলে আপনি নতুন ধারণা পাবেন। এসব আপনাকে আপনার ব্যবসার গতি বাড়াতে অনুপ্রাণিত করবে।